একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে সন্তু লারমার কোন ভবিষ্যৎ নেই বিভিন্ন কারণে; তিনি অনেক বৃদ্ধ, লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ, ক্ষমতার জন্য তিনি খুব বেশি লোভী। এমনকি জেএসএস দলেরও কোন ভবিষ্যৎ নেই। সন্তু লারমা তার দলের নেতৃত্বকে নেতা হতে উৎসাহিত করেননি। জেএসএসের বেশিরভাগ কর্মীই তাদের বস সন্তু লারমার মতো খুব বেশি স্বার্থপর এবং লোভী।
লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে যেকোনো সংগ্রামের জন্য লোভ খুবই ক্ষতিকর। জেএসএস-এর কর্মীরা মূলত পর্যাপ্ত আর্থিক সমৃদ্ধি অর্জনের উপর বেশি মনোযোগ দেয়। যখন আর্থিক সাফল্য সংগ্রামের চেয়ে বেশি হয়, তখন অধিকার লক্ষ্যের অভিমুখ কীভাবে অর্জন করা যায়?
সন্তু লারমা তার সারা জীবনে অর্থ এবং মেয়েদের উপর মনোযোগ দিয়েছেন, তাই তিনি এর চেয়ে বড় কিছু অর্জন করতে পারেননি। বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সন্তু লারমার অর্জন, এই ধারণাটি ভুল কারণ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ভারত ও বাংলাদেশের কূটনীতির মাধ্যমেই হয়েছিল।
প্রশ্ন উঠতে পারে কেন পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পুরোপুরি বা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি, এর কারণ সন্তু লারমার তদবির এবং কূটনীতিতে ব্যর্থতা। তিনি এনজিও কার্যক্রম এবং মেয়েদের এবং আত্মীয়স্বজনদের সেবায় অত্যধিক জড়িত ছিলেন, তিনি সত্যিকারের সংগ্রামের সঠিক পথ হারিয়ে ফেলেছিলেন। অতএব পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিটি অবাস্তবায়িত থেকে যায়।
তার দলের কর্মী এবং সমর্থকরা হয়তো ভাবছেন যে সন্তু লারমা ভারতে গিয়ে আশাব্যঞ্জক কিছু নিয়ে আসবেন। আমি বলছি এটা ভুল ধারণা। সন্তু লারমা একজন দ্বৈত খেলোয়াড়, সন্দেহ নেই তিনি দ্বৈত ভূমিকা পালনে খুব ভালো। তার ভারত সফর আসলে তার দলের সিনিয়র সদস্যদের পুনর্গঠন করার জন্য কারণ দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেখানে কোন গুরুত্বপুর্ণ অফিসারের সাথে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন না।
২০২২ সালে ঢাকায় গোয়েন্দা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন জুবুর ভান্তে নামে জেএসএসের একজন বিদেশ কর্মী। তিনি চীন ও পাকিস্তান থেকে গোলাবারুদ আমদানির জন্য সন্তু লারমার সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করছিলেন। তাদের দলীয় দ্বন্দে কোনওভাবে বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায় এবং থাইল্যান্ড থেকে ঢাকা সফরকালে জুবুর ধরা পড়েন । তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং প্রায় ২৫ দিন ধরে আয়নাঘরে বন্ধী রেখে সব তথ্য নেয়া হয়। জুবুর ভান্তে গোয়েন্দা সংস্থাকে সবকিছু বলে দেয়। সেই সময় থেকে ভারত সরকার সন্তু লারমাকে একজন বিশ্বাসঘাতক হিসেবে বিবেচনা শুরু করে।
পূর্বে জেএসএস ভারতীয় শিক্ষা বৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করত, মঙ্গল কুমার চাকমা সেই দায়িত্বে ছিলেন, তার সুপারিশ ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মঙ্গল কুমার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর, দীপায়ন খীসাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তীতে জুবুর ভান্তে ঢাকায় ধরা পড়ার পর পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তিত হয়, জেএসএস ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসে তাদের প্রবেশাধিকার হারায় এবং অবশেষে ভারতীয় বৃত্তির উপর তাদের নিয়ন্ত্রণও চলে যায়। এখন জেএসএস কৌশল অবলম্বন করে অনলাইন কোচিং আয়োজন করছে। চীনে যাওয়ার জন্য প্রমোট করছে সন্তু লারমাপন্থী ছাত্ররা। পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান জেএসএসের রাজনীতির একটি অংশ। জেএসএসের বেশিরভাগ ছাত্রকর্মী মনোঘোর অনাথ আশ্রম থেকে আসে, এই ছাত্ররা বিদেশে যাওয়ার জন্য অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী। জেএসএস সুপ্রিম এই সুবিধাবাদী অংশকে দিয়ে তার সমর্থন ধরে রাখার উপর মনোযোগ দিয়ে আসছেন চুক্তির পরবর্তী থেকে। তিনি সংগ্রামের উপর মনোযোগ দেননি বলে পার্বত্য চুক্তি উচ্চ আদালতের বিচারকিতে বাতিল হয়েছে।
সন্তু লারমা আন্দোলন কেন্দ্রিক রাজনীতি কোনকালে করেনি। সেজন্য সন্তু লারমার কাছে আন্দোলনের দাবি তোলা মানে এক বন্ধ্যা নারীর কাছে সন্তান প্রত্যাশার মতো হয়ে যায়। যুব প্রজন্মের যারা আন্দোলনমুখী তাদের বুঝতে হবে সন্তু লারমা ও তার দল আন্দোলনে বিশ্বাসী নয়। সেজন্য তারা কখনো সশস্ত্র, কখনো গণতান্ত্রিক, কখনো ভারত আর কখনো চুক্তির আন্দোলনের কথা বলে ঘুম পাড়নির গালগল্প দিয়ে সময়ক্ষেপন করে আসছে। সন্তু লারমা এনজিও, স্কলারশিপ ও চাকুরীর লোভ দেখিয়ে যুব প্রজন্মকে আন্দোলন হতে দূরে সরিয়ে বেপথে পরিচালিত করে আসছে। ফলে ব্যক্তি স্বার্থবাদী সুবিধাবাদী অংশটি সন্তু লারমাকে একটি ট্যুল হিসেবে ব্যবহার করে স্বার্থসিদ্ধি করছে।