চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে আটক থাকা অবস্থায় লাল সাংময় বম’র মৃত্যুর ঘটনাকে রাষ্ট্রীয় কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড মন্তব্য করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।
আজ সোমবার (২ জুন ২০২৫) বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি অমল ত্রিপুরা ও সাধারণ সম্পাদক শুভাশীষ চাকমা সংবাদ মাধ্যমে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, দীর্ঘ দুই বছরের অধিক বিনা বিচারে চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে আটক থাকা অবস্থায় গতকাল ১ জুন ২০২৫ আনুমানিক বিকাল সাড়ে ৪ টায় লাল সাংময় বম চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাটালে মৃত্যুবরণ করেন। এটা স্পষ্টতই রাষ্ট্রীয় কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড। এরপূর্বেও চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বিনা চিকিৎসায় লালত্লেং কিম বম নামের এক যুবক মারা যায়, যা ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে মেরে ফেলার সামিল। অর্ন্তবর্তী সরকার এ হত্যার দায় কখনো এড়াতে পারে না।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় আরো বলেন, যুদ্ধাপরাধী রাজাকার খ্যাত চিহ্নিত অপরাধী ও মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের দায়হীনভাবে মুক্তি দেয়া হলেও বছরের পর বছর ধরে বিনা বিচারে আটক থাকা বম জাতির নিরপরাধ শিশু-কিশোর ও নারী-পুরুষদের এখনো মুক্তি দেয়া হচ্ছে না। পতিত সরকারের আমলে নিরাপত্তা জনিত কারণে মিজোরামে আশ্রিত বমদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না। নতুন বাংলাদেশ রাষ্ট্র নির্মাণের স্বপ্নে বিভোর ইউনূস সরকারের জন্য এর চেয়ে লজ্জাজনক ঘটনা আর হতে পারে না।
নিরপরাধ বমদের মুক্তির দাবি জানিয়ে নেতৃদ্বয় বলেন, রাষ্ট্রের দ্বৈত শাসন নীতিতে পিষ্ট পার্বত্য চট্টগ্রামের জনজাতির ওপর রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। বান্দরবানে বমদের জীবনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তাসহ নির্বিচারে আটক, গ্রেফতার ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে। অবিলম্বে কারাবন্দি বমদের নিঃশর্ত মুক্তি ও কারা হেফাজতে লাল সাংময় ও লালত্লেং কিম বমের মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০২২ সাল থেকে কেএনএফ দমনের নামে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে অন্যায় ধরপাকড়, বিচার বহির্ভুত হত্যাসহ বম জাতিসত্তার জনগণের ওপর অন্যায় দমন-পীড়ন শুরু করে। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ২ ও ৩ এপ্রিল রুমা ও থানচিতে নাটকীয় ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা ঘটলে কেএনএফ বিরোধী যৌথ বাহিনীর অভিযানে বম জাতিসত্তার ওপর নিপীড়ন-নির্যাতনের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পায়। দীর্ঘ সময় ধরে চলা এ অভিযানে এখন পর্যন্ত শতাধিক বম নারী-পুরুষ-শিশুকে গ্রেফতার করে ব্যাংক ডাকাতিসহ বিভিন্ন মামলায় কারাগারে আটক করা হয়েছে। তাদেরকে কয়েক দফায় বান্দরবান জেলা কারগার থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। নাবালক ৪ শিশুও এখন তাদের মায়েদের সাথে কারাগারে বন্দি জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়া আরো অনেককে সেনা হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠিত হলে দেশে সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গীসহ অনেক কুখ্যাত সন্ত্রাসী কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও বম জাতিসত্তার নিরপরাধ নারী-পুরুষ-শিশুদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না।