গত তিন দশক ধরে বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করে আসছে। সরকারের নথি ও বাজেট বিবরণ অনুযায়ী, প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় এই অঞ্চলের অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই অর্থের বাস্তব ব্যবহার কোথায় ? বাস্তবতার নিরিখে আমরা দেখছি, এই বরাদ্দকৃত অর্থে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের জীবনমানের কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি। মূলতঃ এই অর্থ বরাদ্দ হয়, সন্তু লারমার জন্য।
এই তিন দশকে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের দাবি থাকলেও, পার্বত্য চট্টগ্রামে আজও নেই একটি মানসম্পন্ন হাসপাতাল, নেই একটি আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং একবিন্দু উন্নয়নের অবকাঠামো। দূর্ভাগ্যজনকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ এখনও চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে, খাদ্যের অভাবে অনাহারে ভুগছে। এই বৈষম্যের পেছনে যে জটিল দুর্নীতির চক্র কাজ করছে, তা পুরোপুরি স্পষ্ট।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই বিপুল অর্থের একটি বড় অংশ ব্যয় হয়েছে তথাকথিত রাজনৈতিক নেতাদের বিলাসবহুল জীবন যাপনের পেছনে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতা সন্তু লারমা ও তাঁর অনুসারীরা এই উন্নয়ন বরাদ্দের একটি অংশ নিজেদের সুবিধা ও প্রভাব বিস্তারের কাজে ব্যয় করেন। অন্যদিকে, পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ডের সব দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাও সন্তু লারমার সঙ্গে এই অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে যুক্ত।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, জনগণের উন্নয়নের অর্থ সন্তু লারমা এবং জেএসএস নেতাকর্মীরা ব্যবহার করে আসছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রুদ্ধ করতে, বিরোধী কণ্ঠ দমন করতে। সন্তু লারমা ও তাঁর দল বছরের পর বছর এই অর্থ দিয়ে ইউপিডিএফ ও অন্যান্য ভিন্ন মতাবলম্বী গোষ্ঠীর উপর দমনমূলক ব্যবস্থা নিয়ে আসছে। মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে চরমভাবে অবজ্ঞা করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের নিশ্চুপ করে দেওয়ার জন্য এই তহবিল ব্যবহার করে আসছে। পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়নের অর্থ দিয়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ কিনে স্বজাতির সঙ্গে গৃহযুদ্ধ পরিচালনা করছে তারা।
সার্বিকভাবে, পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নের নামে সরকারের অর্থ বরাদ্দ বাস্তব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ব্যয় না হয়ে একটি নিয়ন্ত্রিত, দুর্নীতিপূর্ণ, দমনমূলক ব্যবস্থার পেছনে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই অব্যবস্থার বিরুদ্ধে গণসচেতনতা গড়ে তোলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করা এবং প্রকৃত উন্নয়ন নিশ্চিত করাই এখন সময়ের দাবি।