পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘমেয়াদি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে সন্তু লারমার বিরুদ্ধে UNHRC তে রিপোর্ট করার সময়ের দাবি।
পার্বত্য চট্টগ্রাম দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও জাতিগত উত্তেজনার আবহে একটি সংবেদনশীল অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত। তবে সম্প্রতি এ অঞ্চলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে গুরুতর ঘটনাগুলো সামনে আসছে, তা গত তিন দশক ধরে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই প্রেক্ষাপটে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন প্রশাসনিক ও সশস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রশ্ন তুলা উচিত ভুক্তভোগী জনগণ, সচেতন মহল এবং মানবাধিকারকর্মীরা।
গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে সন্তু লারমা বিনা নির্বাচনে তথাকথিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে থেকে মন্ত্রী মর্যাদার সুবিধা ভোগ করে আসছেন। একদিকে তিনি সরকারিভাবে একজন মন্ত্রীর আসনে আসীন, অন্যদিকে তার নিয়ন্ত্রণাধীন সশস্ত্র বাহিনী পার্বত্য এলাকায় কার্যত একটি সমান্তরাল শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলেছেন। প্রশ্ন জাগে, সরকারের একজন মন্ত্রী কিভাবে নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী পরিচালনা করেন ? তার বিরোধী মতাবলম্বী রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর হামলা, অপহরণ, হ*ত্যা, গুম এবং নির্যাতনের দীর্ঘ তালিকা রয়েছে, যার সঠিক তদন্ত কখনোই হচ্ছে না।
সম্প্রতি ত্রিপুরা রাজ্যে ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে সন্তু লারমার সংগঠনের ১৩ জন সশস্ত্র ক্যাডার গ্রেফতার হয়। চাঞ্চল্যকর তথ্য হলো, তাদের একজন মাত্র ১৭ বছরের এক নাবালক। এটি প্রমাণ করে, কিশোরদের মগজধোলাই করে সশস্ত্র গোষ্ঠীতে অন্তর্ভুক্ত করে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিকল্পিত গৃহযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন সন্তু লারমা। এই কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তি ও শিশু অধিকার সনদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
গতকাল ভিন্ন মতাবলম্বী ও বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের পরিবারকে হত্যার হুমকির অভিযোগ ওঠেছে সন্তু লারমার অনুগত সশস্ত্র সদস্যদের বিরুদ্ধে। এ ধরনের হুমকি কেবল আইনশৃঙ্খলার জন্যই হুমকি নয়, এটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পথে বড় বাধা।
এই অবস্থায়, জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ Human rights council (UNHRC) এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনসমূহের কাছে আহ্বান জানানো উচিত—পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার পরিস্থিতি বিশেষভাবে মনিটর করা হোক এবং সন্তু লারমার বিরুদ্ধে ওঠা গুরুতর অভিযোগগুলো নিরপেক্ষ তদন্তের আওতায় আনা হোক। একই সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারকেও আহ্বান জানানো উচিত—তাদের একজন মন্ত্রী কীভাবে একটি ওপেন সিক্রেট সশস্ত্র বাহিনী পরিচালনা করেন এবং সেই বাহিনী কীভাবে গুম, হত্যা ও শিশু নিযুক্তির মতো আন্তর্জাতিক অপরাধে জড়িত থাকে—তা খতিয়ে দেখার জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা হোক।
পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হলে সবার আগে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। আর সে জন্য প্রয়োজন সাহসী ও নিরপেক্ষ তদন্ত, যাতে সত্য উন্মোচিত হয় এবং অপরাধীরা শাস্তি পায়—তাদের রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক না কেন। এতে বাংলাদেশ সরকার এবং সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রেক্ষাপট ও দায়িত্ব উম্মোচিত হবে।