পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণের ২৯ বছর উপলক্ষে চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের সাজার দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার (১২ জুন ২০২৫) রাঙামাটির কাউখালী সদরের কচুখালীতে হিল উইমেন্স ফেডারেশন প্রতিবাদী নারী সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। উক্ত সমাবেশে অতিথি হিসেবে ঢাকা থেকে আসেন ইউল্যাব’র শিক্ষক অলিউর সান, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নূজিয়া হাসিন রাশা ও অ্যাক্টিভিস্ট মার্জিয়া প্রভা।
সমাবেশ শেষে ঢাকার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামে যাওয়ার পথে তারা সেটলারদের হামলার শিকার হয়েছেন।
জানা গেছে, সমাবেশ শেষে বিকাল ৪টার দিকে কাউখালী সদর থেকে একজন সঙ্গীসহ তারা তিনজন সিএনজি (অটোরিক্সা) যোগে ঢাকায় ফেরার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামের দিকে রওনা হন। তারা বেতছড়ির মুরগী ফার্ম এলাকায় (কাউখালী সদর থেকে ৩/৪ কিলো দূরে) পৌঁছলে পিছন দিক থেকে মোটর সাইকেলে করে আসা তিনজন সেটলার বাঙালি তাদের পথরোধ করে সিএনজিটি আটকায় এবং তারা কেন ইউপিডিএফের সমাবেশে এসে বক্তব্য দিয়েছেন তা জানতে চায়। এরপর তারা (সেটলাররা) প্রথমে ইউল্যাবের শিক্ষক অলিউর সান-এর ওপর হামলা চালায়। এতে বাম চোখে তিনি আঘাত পান। হামলায় তাঁর চশমাও ভেঙে যায়। হামলাকারীরা নূজিয়া হাসিন রাশাকে কব্জি ধরে মোচড় দেয় এবং মার্জিয়া প্রভার ওপরও আক্রমণ করে।
হামলাকারী সেটলাররা তাদেরকে ‘ঢাকায় যেতে দেবে না, সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যাবে’ বলে হুমকি দেয়। তাদের এমন হুমকির মধ্যে অলিউরসানসহ আক্রান্ত তিন জন বিচলিত না হয়ে যখন বলেন, চলেন আমরা সেনা ক্যাম্পে যাবো, থানায় যাবো। তখনই সেটলাররা তাদেরকে পথ ছেড়ে দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।
এ সময় অতিথিদের সাথে ছিলেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ চাকমা।
এ ঘটনায় সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দাদের সংশ্লিষ্টা রয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। তারা বর্তমানে ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামের পথে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ হামলার ঘটনাটি নিয়ে নূজিয়া হাসিন রাশা তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এতে তিনি লিখেছেন-
“কাউখালিতে আর্মির পোষা বাঙালি সন্ত্রাসীরা আমাদের পথ আটকে আমরা কেন আসছি, কাদের প্রোগ্রামে বক্তব্য দিছি প্রশ্ন করে আমাদের উপর হামলা চালায়৷
আজ ১২ জুন, কল্পনা চাকমার গুমের ২৯ বছর পূর্তির দিনে, কল্পনা চাকমার অপহরণকারীদের বিচারের দাবিতে বক্তব্য প্রদানকালেই দেখেছি আমাদের পিছনে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ঘুরঘুর করছে৷ আমরা চট্টগ্রাম ফেরার পথে সেটলারদের দিয়ে আমাদের পথ আটকায়৷ তারা ফোনে নিশ্চিত করছিলো– “যে লাল টিপ পরা এক মেয়ে, তার সাথে আরেক মেয়ে আর এক ছেলে – এরাই তো?” এরপর তারা ULAB-এর শিক্ষক অলিউর সান ভাইয়ের উপর হামলা চালায়, আমার কব্জি ধরে মোচড় দেয় এবং প্রভা আপুর উপরও আক্রমণ করে। তারা হুমকি দেয় আমরা ঢাকা যেতে পারবো না। তারা আমাদের সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যাবে। তাহলে পাহাড়ের বাঙালি সন্ত্রাসীরা এভাবেই সেনা ক্যাম্পে মানুষ ধরে নিয়ে যায়? এই হামলা শুধু ব্যক্তিগত নিরাপত্তার উপর নয়, বরং জনগণের মতপ্রকাশের অধিকার, প্রতিবাদ জানানোর অধিকার, এবং বিচারহীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া নাগরিকদের উপরও সরাসরি আঘাত। পাহাড়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কারা চালায় তাহলে এবার দেখেন।