গতকাল ১২ জুন ২০২৫ কাউখালী সমাবেশ থেকে ফেরার পথে অতিথি বক্তাদের ওপর হামলা আর সন্তু লারমা জেএসএস কর্তৃক ২০১৬ সালে ২৬ অক্টোবরের হামলার ঘটনা কেন মিল রয়েছে?
আমরা ১২ জুন ঘনিয়ে আসলে বেশি করে কল্পনার চাকমার কথা বলি। সভা,সেমিনার,সমাবেশ করে প্রতিবাদ করি। বিক্ষুব্দ হয়ে কল্পনাকে উদ্ধারের কথা বলি। কেউ রাজপথে তপ্ত রোদ্রে, তীব্র দাহদাহে। কেউ এসিযুক্ত /হলরুমে,কেউ পাখাযুক্ত হলরুমে। কেউ লেঃফেরদৌসদের চোখ রাঙ্গিয়ে,কেউবা সেনাবাহিনী আমাদের গৌরব বলে ভূয়সী প্রশংসায় নত জানু হয়ে।
১২ জুন কল্পনা অপহরণের তারিখ কাছাকাছি আসলে সেনাদের যেন বজ্রপাত হয়। ঘুম হারাম হয়ে যায়। তাই সেনাবাহিনী সভা- সমাবেশসহ বিভিন্নভাবে বাধা প্রদানের চেষ্টা করে। কল্পনা অপহরণের ২৯ বছরও তার ব্যতিক্রম নয়।
গত ১২ জুন কাউখালীতে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সমাবেশ করেছে। সমাবেশে সংহতি জানাতে সমতল থেকে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাবি সভাপতি নূজিয়া রাশা,এক্টিভস্ট মার্জিয়া প্রভা, ইউল্যাবের শিক্ষক অলিউর সান উপস্থিত হয়।
একদিকে সমাবেশকে ঘিরে ১১জুন রাতে জেএসএস সন্তু লারমার নেতাকর্মীরা একাধিক ফেক আইডি থেকে উপুর্যপুরি গুলি বর্ষণের হুমকি প্রদান করে। রাঙ্গামাটি থেকে সাংবাদিক আলমগীর মানিক ফেসবুকে পোষ্ট করে জানান দেয় যে, ইউপিডিএফ/ সমাবেশ ঠেকা রাস্তায় রাস্তায় চেক পোষ্ট বসিয়েছে। তাহলে কি আঞ্চলিক পরিষদ ছায়া সেনা জোন?এধরণের চেক পোষ্ট পাহাড়ে একমাত্র সেনাবাহিনীর থাকে, সময়ে বাড়িয়ে বসায়। যাতে সভা সমাবেশে বাধা প্রদান করা যায়।
অপরদিকে কাউখালীতে সমাবেশ বানচাল করে দিতে সকাল হতেই পাড়ায় পাড়ায় সেনাবাহিনীর মহড়া। যাতে জনগণ ভয়ে ভীত হয়ে অংশগ্রহন না করে। সমাবেশ চলাকালীন সেনা- ডিজিএফআইদের নির্দেশ রেশনখোর সেটলারা মিছিল করে। সুযোগ পেলে সমাবেশে হামলা করতো। সমাবেশ থেকে ফেরার পথে গাড়ি আটকে নূজিয়া হাসিন রাশা,মার্জিয়া প্রভা, অলিউর সানদের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করে। সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়।
এই গুলি,হুমকি, মারধর, হামলা, তুলে নেওয়ার ঘটনা সমূহের সাথে মিল রয়েছে ২০১৬ সালে ২৬ অক্টোবর ঘটনা।
সেদিন কল্পনা অপহরণের প্রসহসনমুলক ৩৯ তম তদন্ত রিপোর্ট প্রত্যাখান করে হিল উইমেন্স ফেডারশনের নেতাকর্মীরা জজ কোটের সম্মূখে অবস্থান ধর্মঘট পালন করে। ধর্মঘট চলাকালীন হঠাৎ সন্তু লারমার ২ নাম্বারি পিসিপি তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জুয়েল চাকমা তার দলবল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ব্যানার কেঁড়ে নেয়। হুমকি ,ব্যানার কেঁড়ে নিয়ে,মারধর করা দেখে মনে হয় জুয়েল চাকমা নয়, স্বয়ং লেঃফেরদৌসই তার গং নিয়ে ঝাপিয়ে পড়েছে। সমবেত জনতার মধ্যে থেকে সুযোগ বুঝে অপহরণ করে নিয়ে যায় তৎকালীন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরুপা চাকমাসহ ৪ জনের অধিক নেতাকর্মীকে। যেমনটা লেঃফেরদৌস গং কল্পনাকে তার মা- দাদা’দের কাছে থেকে অপহরণ করেছিল। সমালোচনার তোপে পড়ে প্রায় সন্ধ্যার দিকে সভাপতি নিরুপা চাকমাসহ ৪ জনের অধিক অপহৃতদের মুক্তি দেয় জুয়েল চাকমা ওরুফে লেঃফেরদৌস।
প্রকাশ্যে দিবালোকে পুলিশের সামনে সেদিন জর্জ কোটের সম্মূখে এই ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনায় রাঙ্গামাটিবাসী অনেকেই স্বাক্ষী। হামলার ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে রাঙ্গামাটিবাসীসহ নেটিজেনেরা ধিক্কার জানিয়ে বলেছিল “তারা কল্পনা চাকমার বিচারই তো চাইতে এসেছে” অন্য কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে তো নয়। যা সদরে থেকে আমাদের করার কথা,তারা হুদুকছড়ি,নান্যচর থেকে এসেছে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। তাদেরই ওপর হামলা। এটা তো সেনাবাহিনী করে থাকে। হামলা করেছে তো করেছে আবার সেই লেঃ ফেরদৌসের মত নেত্রী মন্টি চাকমাকেও অপহরন করল।
তাহলে এখন প্রশ্ন হচ্ছে সন্তু লারমা কি সেনা/লেঃফেরদৌসের প্রতাত্মা?জুয়েল চাকমা কি সালেহ আহমেদ? ১২ জুনের মত একটি সমাবেশে লেঃফেরদৌস,সালেহ আহমেদ গংরা কল্পনার বিচার চাইতে গেলে ব্রাশ ফায়ার করার হুমকি দিয়েছে। এই জুম্ম লেঃফেরদৌসের গং চাই না কল্পনা অপহরণের বিচার হোক। তাই তারা দায়ছাড়তে এসিরুমে বসে নত জানু হয়ে সন্তু- উষাতন সেনা/সরকারের সাথে উঠাবসা-মেলামেশার ভালবাসার বক্তব্য দেয়।
হয় তো সেকারণে ১৯৯৮ সালে ১০ ফেব্রয়ারি খাগড়াছড়ি স্টোডিয়ামে আত্মসমর্পনের সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সন্তু লারমা বলেছিল- “কল্পনার অপহরণের ঘটনা বির্তকিত”। বাহ! কত বড় বেহায়া মন্তব্য। এই নির্লজ্জ বেহায়া মন্তব্যর জন্য সন্তু লারমাকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
১২ জুন বোন কল্পনার অপহরণের ২৯ বছরে এসে আমি ‘Gen-Z’দের উদ্দেশ্য বলতে চাই, আপনাদের জেএসএসকে / সন্তু -উষাতনকে প্রশ্ন করতে হবে সব কিছু জেনেও কেন “কল্পনা অপহরণের ঘটনা বির্তকিত বলে মন্তব্য করেছিল” কেন কল্পনার বিচার চাইতে যাওয়া জনতার ওপর হামলা চালিয়েছে, কেন নিরুপা, মিনাকি চাকমাদের অপহরণ করেছিল, আজোও কেন তারা ব্রাশ ফায়ারের হুমকি দিয়েছে?