আজ ২৬ জুন মাটিরাঙ্গা গোমতি-বেলছড়ি গণহত্যা দিবস, বিচারের অপেক্ষায় ৪৩ বছর
আজ ২৬ জুন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে এক কালো দিন। খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার গোমতি ও বেলছড়ি এলাকায় পালিত হচ্ছে ‘গণহত্যা দিবস’। ১৯৮১ সালের এই দিনে, এই দুটি এলাকায় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর উপর সংঘটিত হয় এক ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হামলা ও গণহত্যা। সেই নারকীয় ঘটনায় বহু নিরীহ পাহাড়ি গ্রামবাসী নিহত হন, তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয় এবং অগণিত মানুষ আহত ও বাস্তুচ্যুত হন।
ঘটনার প্রেক্ষাপট ও ভয়াবহতা:
প্রত্যক্ষদর্শী ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার তথ্যমতে, ১৯৮১ সালের ২৬ জুন সকালে বাঙালি সেটেলারদের একটি বড় দল নিরাপত্তা বাহিনীর একাংশের সহযোগিতায় গোমতি ও বেলছড়ির ত্রিপুরা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে সশস্ত্র হামলা চালায়। হামলাকারীরা নির্বিচারে নারী, পুরুষ ও শিশু হত্যা করে এবং গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল পাহাড়িদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে দখল করা। এই পরিকল্পিত হামলায় জীবন বাঁচাতে হাজার হাজার পাহাড়ি সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।
বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে:
এই নৃশংস গণহত্যার ৪৩ বছর পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক তদন্ত বা বিচার হয়নি। নিহতদের পরিবারবর্গ এবং ক্ষতিগ্রস্তরা কোনো বিচার বা ক্ষতিপূরণ পাননি। বছরের পর বছর ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও রাজনৈতিক দল এই গণহত্যার বিচার দাবি করে আসলেও তা উপেক্ষিতই রয়ে গেছে। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের মধ্যে গভীর হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
স্মরণ ও দাবি:
আজকের এই দিনে, পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে নিহতদের স্মরণে শোকসভা, প্রদীপ প্রজ্বলনসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়। বক্তারা এই দিনটিকে আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানান এবং অবিলম্বে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে দোষীদের চিহ্নিত ও বিচারের আওতায় আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
গোমতি-বেলছড়ি গণহত্যা দিবস কেবল একটি শোকের দিন নয়, এটি পাহাড়িদের উপর চাপিয়ে দেওয়া ঐতিহাসিক অন্যায় ও বঞ্চনার এক জীবন্ত দলিল। এই দিনের স্মরণ সভা থেকে বারবার উচ্চারিত হয়—শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য ঐতিহাসিক ক্ষতের নিরাময় অপরিহার্য, আর তার প্রথম পদক্ষেপ হলো ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।