সেনাবাহিনীর ছায়ায় সন্তু লারমা, পাহাড়ে জটিল হচ্ছে রাজনৈতিক সমীকরণ
পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন করে উত্তেজনার সঞ্চার হয়েছে জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড ঘিরে। পাহাড়ের রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের শক্ত অবস্থানে থাকা সন্তু লারমা ও তার অনুগত একটি অংশ এখন পুরোদমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ঘনিষ্ঠতায় অবস্থান করছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
সেনাবাহিনীর সাথে যৌথ অপারেশনে সন্তু বাহিনী
বিশ্বস্ত সূত্র মতে, ২৪ জুন ২০২৫ তারিখে রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার কোজোইছড়ি মৌন এলাকায় পরিচালিত একটি অপারেশনে সেনাবাহিনীর সাথে সরাসরি অংশ নেয় সন্তু বাহিনীর সদস্যরা। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেদিন সকালেই তারা কয়েকজন অচেনা সশস্ত্র ব্যক্তিকে সেনাবাহিনীর সাথে রাস্তা পার হতে দেখে চমকে যান। পরে জানা যায়, এরা সন্তু বাহিনীর সদস্য, যারা সেনা অভিযানে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে।
তথ্যসূত্র আরও জানায়, ওই অভিযানে সেনাবাহিনীর "অস্ত্র উদ্ধার" নাটকে ব্যবহৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদও সরবরাহ করেছে সন্তু লারমার বাহিনী। অভিযানের আগে রাঙামাটির কল্যাণপুর এলাকায় সন্তু লারমার বাসভবনে তার বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের কমাণ্ডারদের সাথে একটি গোপন বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়।
চেয়ারের লড়াইয়ে সেনাবাহিনীই ভরসা? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সন্তু লারমার এই অবস্থান প্রধানত পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারটি ধরে রাখার কৌশলের অংশ। তার এই কৌশল বাস্তবায়নের জন্য সেনাবাহিনীর সহায়তা এখন তার একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় নিজের দল, এমনকি বাহিনীকেও তিনি সেনাবাহিনীর কাছে কার্যত সঁপে দিতে উদ্যত হয়েছেন।
তবে জনসংহতি সমিতির ভেতরে এ সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। দলটির একাংশ এখনও সেনাবাহিনীর ঘনিষ্ঠতা থেকে নিজেদের বিরত রাখতে চাচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, তারা কতদিন এমন চাপের মধ্যে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পারবে।
জনগণের সাথে বেঈমানি বলছেন বিশ্লেষকরা, সন্তু লারমার এমন পদক্ষেপকে গভীর উদ্বেগের সাথে দেখছেন সচেতন পাহাড়ি মহল ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, যে সেনাবাহিনী দীর্ঘকাল ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে গণহত্যা, জোরপূর্বক উচ্ছেদ, ধর্ষণ, গুম, গ্রেপ্তার ও সাম্প্রদায়িক নিপীড়ন চালিয়েছে সেই সেনাবাহিনীর সাথে মিত্রতা মানে হলো জুম্ম জনগণের সাথে বেঈমানি করা।
বিশ্লেষকরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “এটা শুধু রাজনীতির নয়, বরং জুম্ম জনগণের অস্তিত্ব সংকটের প্রশ্ন। সন্তু লারমা যদি এই ধারা অব্যাহত রাখেন, তাহলে পাহাড়ে আরও গভীর সংকটের জন্ম হবে।”
সন্তু লারমাসহ তার আশপাশের নেতৃবৃন্দকে এমন 'জাতিধ্বংসী' ষড়যন্ত্রের পথ থেকে সরে এসে জনগণের স্বার্থে ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এই পরিস্থিতি পাহাড়ি রাজনীতিতে একটি বড় মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। পাহাড়ি জাতিসত্তার মুক্তির সংগ্রামে একসময়ের প্রতীক হয়ে ওঠা সন্তু লারমা আজ যদি সেনাবাহিনীর প্ররোচনায় নিজের দলকেই বিভক্ত করেন—তাহলে জুম্ম জনগণের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে, সে প্রশ্ন এখন সময়ের কাছে ঋণ হয়ে রইলো।