জীবনের কিছু সময় শুধু সময় নয়, একটি অধ্যায় হয়ে যায়—যা রক্তে, মগজে, আত্মায় গেঁথে থাকে। “বর-পরং” ঠিক তেমনই একটি অধ্যায়। আজ তার সাত বছর পূর্ণ হলো।
২০১৮ সালের ৬ আগস্ট আমি দেশ ছাড়ি। বাংলাদেশ থেকে ভারত, তারপর জার্মানি, মাঝখানে প্যারিস আর রোম ঘুরে অবশেষে পৌঁছাই অস্ট্রেলিয়ায়। এই দীর্ঘ ও দুর্গম পথচলায় অনেক বন্ধু, অনেক সহযোদ্ধা পাশে থেকেছেন। তাঁদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা চিরন্তন। যদিও অনেকেই আজ আর আমার রাজনৈতিক আদর্শে সংহতি প্রকাশ করেন না, তবু তাঁদের অবদানের কথা আমি ভুলতে পারি না। তাঁদের হাত ধরেই তো এক নতুন জীবন শুরু হয়েছিল।
২০১৮ সালের ১৫ এপ্রিল। খাগড়াছড়ির বাড়িতে আমাকে খুন করতে গিয়েছিল সেনাবাহিনীর পোষা গুন্ডারা—আমারই স্বজাতির মুখোশ পরে। ভাগ্যিস, পাঁচ এপ্রিল বিকেলে আমি দুই ঘণ্টার নোটিশে শহর ছেড়ে গিয়েছিলাম। সেই তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তই আমাকে আজকের এই লেখার সুযোগ করে দিয়েছে।
আমার রাজনীতিতে না ঝোঁকার সিদ্ধান্ত, আওয়ামী লীগে যোগ না দেওয়ার অনমনীয়তা—এইসবই ক্রমে ক্রোধের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আদালত প্রাঙ্গণে ভয়ভীতি, গোয়েন্দাদের হুমকি, অর্থ ও ক্ষমতার লোভ—এসবের মধ্যেও আমি কাজ করে গিয়েছি নীরবে। যখন দেখলাম ভিখারির ছদ্মবেশে সরকারী গোয়েন্দারা চেম্বারের সামনে ঘোরাফেরা করছে, তখন বুঝেছিলাম—সময় ফুরিয়ে এসেছে। সিনিয়রকে জানিয়ে ধীরে ধীরে গুছিয়ে নিতে শুরু করি।
তবু ভাবিনি, আমাকে খুন করতে আমার নিজ বাড়িতে গুন্ডা পাঠাবে।
আমার নামে খুনের মামলা দেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ—আমি নাকি লংগদুতে কাউকে খুন করেছি! এই মামলার পরে আমি বাধ্য হই দেশ ছাড়তে। ৬ আগস্ট ২০১৮, আমার জীবনের মোড় ঘোরানো সেই দিন।
সাত বছর পেরিয়ে গেছে। তবু খাগড়াছড়ির আদালতের প্রাঙ্গণে গেলে এখনো কেউ কেউ আমার কথা বলেন। আমার চেম্বারের সামনে আজও ঝুলে আছে আমার নামফলক। কিছু ভালোবাসা সময়কে পেরিয়ে যায়—এই প্রাপ্তি আমার হৃদয়ে অমূল্য হয়ে আছে।
যারা আমাকে মারতে চেয়েছিল, তাদের আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি কর্মফলে বিশ্বাস করি। আজ আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, তা আমার সাহস আর কর্মের ফসল।
তাঁরাও একদিন তাঁদের কর্মফল ভোগ করবেন। এই জগতের নিয়মই এটাই।