খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার দিঘীনালা উপজেলার নারাইছড়ি ডুলুছড়ি ও পানছড়ি উপজেলার মধু রঞ্জন পাড়ায় নিহত দুই জেএসএস (সন্তু) সশস্ত্র সদস্যের মরদেহ পরিবারে ফেরত না দেওয়ায় এলাকায় শোক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
বিকাশ চাকমার ঘটনা
গত ৪ আগস্ট দিঘীনালার নারাইছড়ি ডুলুছড়িতে জনতার প্রতিরোধে নিহত হন পানছড়ি শণখোলা গ্রামের কার্বারী নলাক মুনির ছেলে তরুণ বিকাশ চাকমা (ডাকনাম ‘ভাত পাগলা’)। তাঁর জন্ম ১২ আগস্ট ১৯৯৯, গ্রাম দুর্গা মনি পাড়া, ২নং চেঙ্গী ইউনিয়ন, পানছড়ি।
পিতা নলাক মনি চাকমা ও মাতা শ্যামলতা চাকমা জানান, বহুবার অনুরোধ করেও জেএসএস সন্তু বাহিনীর কাছে ছেলের লাশ ফেরত পাননি। এমনকি মৃত্যুর খবরও আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। তারা সন্দেহ করছেন, ছেলে নিহত হওয়ার পর সংগঠনটি ইচ্ছাকৃতভাবে খবর গোপন করছে।
পরিবার জানায়, ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তারা প্রতিদিন কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। সাপ্তাহিক ধর্মীয় আচার সাত দিন্নে পালনের জন্য অনুমতির আবেদন করলেও সমাজে “লাশবিহীন সাত দিন্নে” অনুমোদন দেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
এলাকাবাসীর মতে, প্রায় ৩-৪ বছর আগে শণখোলা পাড়ার জেএসএস সশস্ত্র সদস্য পূর্ণমুনি চাকমা হনা ওরফে ডিনেশ ‘গরুচোরা’র প্রলোভনে পড়ে বিকাশ চাকমা জেএসএস (সন্তু) গ্রুপে যোগ দেন।
রুপেশ তংচঙ্গ্যার ঘটনা
গত ১১ আগস্ট পানছড়ির মধু রঞ্জন পাড়ায় সংঘর্ষে নিহত হন জেএসএস (সন্তু) প্লাটুন কমান্ডার রুপেশ তংচঙ্গ্যা। অভিযোগ রয়েছে, মৃত্যুর খবর পরিবারকে না দিয়ে তড়িঘড়ি করে গহীন জঙ্গলে তাঁর দাহক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় এবং মাত্র ১০ টাকা দিয়ে ঘটনাটি শেষ করার চেষ্টা করা হয়।
রুপেশের পিতা-মাতা লাশ নিতে পানছড়ি পর্যন্ত এলেও জেএসএস নেতাদের কারও সাথে দেখা পাননি। পরে জানতে পারেন, তাদের অনুপস্থিতিতেই দাহ সম্পন্ন হয়েছে। পরিবার অভিযোগ করে বলেছে—যে সংগঠনের জন্য তিনি যৌবন উৎসর্গ করেছেন, মৃত্যুর পর সেই সংগঠনই তাঁকে অমর্যাদা করেছে।
সংগঠনগুলোর আচরণের পার্থক্য
অন্যদিকে, ইউপিডিএফ তাদের নিহত সদস্যদের মরদেহ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে সহযোদ্ধাদের অংশগ্রহণে সম্মানজনক বিদায় অনুষ্ঠান আয়োজন করে এবং ‘শহিদ’ উপাধি প্রদান করে। এতে পরিবার ও সমাজের মর্যাদা রক্ষা হয় এবং সদস্যদের মনোবল অক্ষুণ্ণ থাকে।
স্থানীয়রা বলছেন, জেএসএস (সন্তু) বিপরীত আচরণের কারণে সংগঠনের ভেতরে হতাশা ও ক্ষোভ বাড়ছে, অনেক সদস্য বিভিন্ন শহর ও বন্দরে পালিয়ে যাচ্ছেন।