আজ ২৬ আগস্ট। খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলায় পাহাড়িদের উপর চালানো ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক হামলার ২২ বছর পূর্ণ হলো। ২০০৩ সালের এই দিনে তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সেটলার বাঙালিরা অন্তত ১০টি পাহাড়ি গ্রামে হামলা চালিয়ে চার শতাধিক ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়।
সেদিন নৃশংসভাবে খুন হন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বিনোদ বিহারী খীসা ও মাত্র আট মাস বয়সী এক শিশু। ধর্ষণের শিকার হন অন্তত ১০ জন জুম্ম নারী। চারটি বৌদ্ধ বিহার জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, ভাঙচুর করা হয় বুদ্ধমূর্তি, আর লুটপাটে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় পাহাড়ি গ্রামগুলো। হামলায় অর্ধশতাধিক পাহাড়ি আহত হন, লাঞ্ছিত হন বৌদ্ধ ভিক্ষুরাও।
অভিযোগ অনুযায়ী, সেনাবাহিনীর সোর্স রূপন মহাজনকে অপহরণের অজুহাতে পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালানো হয়। ঘটনার দিন সাপ্তাহিক হাটবারে পাহাড়িদের বাজারে প্রবেশে বাধা দেওয়া, দোকান ভাঙচুর এবং পরে সকাল ৯টার দিকে বাবুপাড়া গ্রামে মিছিল নিয়ে হামলা—সবই ছিল সংঘবদ্ধ তৎপরতা। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, সেনাসদস্যরাও সরাসরি গ্রাম পোড়ানোতে অংশ নেন এবং ২১ ইবিআর-এর সেনারা বোটযোগে সেটলারদের পেট্রোল ও কেরোসিন সরবরাহ করে।
এই বর্বর হামলার পর দেশে-বিদেশে তীব্র প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হলেও তৎকালীন বিএনপি সরকার বিচার তো দূরে, বরং হামলাকারীদের রক্ষা করে। দীর্ঘ ২২ বছরেও হামলাকারী সেনা-সেটলারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এই বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই পরবর্তী সময়ে সাজেক, তাইন্দং, লংগদু, মাইসছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক সাম্প্রদায়িক হামলা সংঘটিত হয়েছে। প্রতিটি হামলাতেই সেনাবাহিনীর কায়েমি স্বার্থবাদী অংশ জড়িত ছিল বলে তাদের অভিযোগ।
তারা বলেন, পাহাড়ি জনগণের নিরাপত্তা দেওয়ার বদলে রাষ্ট্রীয় বাহিনী বারবার হামলাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। আওয়ামী লীগ হোক বা বিএনপি—প্রতিটি সরকারের আমলেই পাহাড়িদের ওপর দমন-পীড়ন, গণহত্যা ও সাম্প্রদায়িক আক্রমণ ঘটেছে।
চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়েও পাহাড়িরা এ ধরনের হামলা থেকে মুক্তি পায়নি।