আজ ০১ সেপ্টম্বর ২০২৫, সোমবার, অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা দমন-পীড়ন বন্ধ কর,’অপারেশন উত্তরণ ‘তুলে নাও’!
সেনা অভিযানের নামে স্কুলভবন ‘অস্হায়ী ক্যাম্প’বানিয়ে নির্বিচারে বাড়িঘরে তল্লাশি,নারীদের সাথে অসদাচরণ,লুটপাট,ধরপাকড়,হয়রানি,স্কুলের কার্যক্রম ব্যাহত ও অবর্ণনীয় জন দূর্ভোগ সৃষ্টির প্রতিবাদে সাজেক উজোবাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে সাজেক গণঅধিকার রক্ষা কমিটি।
বিক্ষোভ মিছিলটি উজোবাজারে পৌছালে সেনাবাহিনী বাধাঁ দেওয়ার চেষ্টা করে। পরে উত্তেজিত জনতার মূখে সেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলায় বিভিন্ন গ্রামে কয়েক মাস যাবৎ ব্যাপক হারে সেনা অভিযান বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ২৯ আগস্ট পানছড়ি চেঙ্গী ইউনিয়নে বুদ্ধরাম পাড়ায় চিজিমুনি চাকমাকে পাশবিক নির্যাতন চালায়। একই ইউপিতে রত্নসেন পাড়ার বাসিন্দা সুর মঙ্গল চাকমার বাড়ি ঘেরাও করে তল্লাশি করা হয়। এসময় সেনারা লেপ+তোশক-হাড়ি পাতিল- ধানের বস্তা,কম্বল ও ছেলেমেয়েদের বইপত্র নিয়ে যায়।সেনারা পরিবারে নারী শিশু সদস্যদের হুমকি দিয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে।
সেনারা অমল মিত্র চাকমা ও প্রফুল্ল চাকমার বাড়িতে তল্লাশি চালায়। এখনও পর্যন্ত সেনাবাহিনী পানছড়ির বিভিন্ন গ্রামে অবস্থান করছে। রাত ঘনিয়ে এলে সাধারণ জনগণের বসত বাড়িতে তল্লাশির নামে হানা দেয়। তারও আগে আরও ৭টি বাড়িতে অভিযানের নামে তল্লাশি চালিয়ে লুটপাট করা হয়।
৩০আগস্ট রাত ৪টা সময়ে দিঘীনালা উপজেলায় বাবুছড়া ইউনিয়নে উল্টোছড়ি গ্রামে অমৃলাল চাকমা (জুয়েল বাপ) বাড়িতে তল্লাশি চালায়। এসময় সেনারা নগদ ৫,৫০০ টাকা এবং ২টি মোবাইল ফোন লুট করে নিয়ে যায়। সোলার প্যানেল ভেঙ্গে দেয়। গৃহস্থালি সামগ্রী পুড়িয়ে দেয়। একই গ্রামে সেনারা জ্ঞান রতন (রাশি বাপ) চাকমাকে ধরে শারীরিক নির্যাতন চালায়।
গতকাল ২৯ আগস্ট উল্টাছড়ি শ্যামচরণ কার্বারি পাড়া থেকে সেনাবাহিনী ৬ গ্রামবাসীকে আটক করে মানসিক নির্যাতন ও হয়রানি চালায়।
ভুক্তভোগীরা হলেন- ১. শ্যামল জ্যোতি চাকমা, ২. মিনা বাপ, ৩.রুপান্ত চাকমা, ৪. চিজি চাকমা, ৫. রাতুল্যা চাকমা ও ৬. সন্তোষ চাকমা।
সেনারা তাদেরকে ৩-৪ ঘন্টা ধরে বেঁধে রেখে নানা জিজ্ঞাসাবাদ করে মানসিক নির্যাতন ও হয়রানি করে ছেড়ে দেয়। এছাড়াও সেনারা সন্তোষ চাকমা ও জেসমিন বাপ বাড়িতে তালা দরজা ভেঙ্গে তল্লাশি চালিয়ে মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। বর্তমানে সেনাবাহিনী বর্বোপাড়া স্কুলে অবস্থান করছে।
৩০ আগস্ট পানছড়ি যুবনাশ্ব পাড়ায় ২ শতাধিক সেনা অভিযান চালায়। এতে একজনকে আটক করে হয়রানি করা হয়।
এছাড়া গত ২০ আগস্ট বর্মাছড়ি দেওয়ান পাড়ার বাসিন্দা কামদেব চাকমার বাড়ি থেকে সেনারা নগদ ১১ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এছাড়াও কতুকছড়িতে ভোর রাতে ঘেরাও করে লুটপাট চালায় সেনারা। গুইমারা সিংগুলি পাড়া এক বিধবার বাড়িতেও এমন তান্ডব চালায় সেনারা।
যৌথ বাহিনীর এহেন হয়রানিমুলুক অভিযানে কারণে জনগণের মাঝে চরম আতংক উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। কিছু কিছু গ্রামে অযথা গ্রেফতার ও নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে রাত হলে পুরুষশূণ্য হয়ে যায়।
যৌথবাহিনীর এহেন দমনমুলক, হয়রানি-লুটপাটের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে পাহাড়ের সচেতন মহল ও ভক্তভোগীরা।
তারা বলেন, নাগরিক হিসেবে আমাদেরও শান্তিতে বসবাস করার অধিকার আছে। সেনাবাহিনী এই অধিকার হরণ করছে। বিনা পরোয়ানায় যখন তখন ঘরবাড়িতে তল্লাশি করছে। বাড়ির জিনিসপত্র তছনছ করে দিচ্ছে। টাকা পয়সা, ডক্যুমেন্ট , দলিলপত্র লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। সেনা অপারেশনের কারণে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে।
আমরা বাড়িতে, ক্ষেতে খামারে কাজে যেতে পারছি না। স্কুলে ছেলেমেয়েরা ক্লাশ করতে পারছে না। কারণ সেনা সদস্যরা স্কুল ঘর দখল করে থাকে অপারেশনের সময়। বাড়ির মেয়েরা সব সময় ভয় ও আতঙ্কে থাকে। কারণ অতীতে অপারেশন ও টহলের সময় মেয়েদের অপহরণ, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির অনেক ঘটনা ঘটেছে।
সেনারা বলে তারা সন্ত্রাসী খোঁজে। কিন্তু আসল সন্ত্রাসীদেরকে তো তারাই পুষে থাকে। এবং তাদেরকে দিয়েই তারা হত্যা, অপরহণ, চাঁদাবাজি করছে। বাজারঘাটেই সন্ত্রাসী থাকে গ্রামে নয়।
তাই সচেতন মহল ও ভুক্তভোগীরা দাবি জানায়, অবিলম্বে অপারশনের নামে তল্লাশি, লুটপাট, হয়রানি, ও বেআইনী গ্রেফতার বন্ধ করতে হবে। যেসব টাকা ও দলিলপত্র লুট করে নেয়া হয়েছে সেগুলো ফেরত দিতে হবে। প্রকৃত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করতে হবে ও তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান বন্ধ করতে হবে।পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে।সমতলের মতো পার্বত্য চট্টগ্রামেও গণতন্ত্র দিতে হবে।