“আমরা বলেছি জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সংবিধান সংস্কারে যেন আগের ভুলের পুনরাবৃত্তি না হয়। যেন সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্য থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজে বের করা হয়।”
সংবিধান সংস্কারে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বায়ত্তশাসন না এলে ‘নতুন করে সংকট সৃষ্টি হবে’ বলে সতর্ক করেছে উনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-ইউপিডিএফ।
দলটির নেতারা বলছে, বাহাত্তরের সংবিধানের প্রস্তাবটি উপেক্ষা করায় পার্বত্য অঞ্চলে দীর্ঘ ছয় দশক ধরে রক্তক্ষয়ী সংঘাত হয়েছে।
সংবিধানে সংস্কারে যেন সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি যেন না হয় সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।
শনিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে কথা বলছিলেন দলটির ঢাকা অঞ্চলের সংগঠক মাইকেল চাকমা।
সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ১২টার দিকে সংলাপের মূলতবি হয়। আগামী ১৫ মে বিকালে ফের সংলাপে বসার কথা রয়েছে।
মাইকেল চাকমার নেতৃত্বে এদিন দলটির ৪ সদস্য সংলাপে অংশ নেন।
তিনি বলেন, “আমরা বলেছি জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সংবিধান সংস্কারে যেন আগের ভুলের পুনরাবৃত্তি না হয়। যেন সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্য থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজে বের করা হয়। তা না হলে সেখানে নতুন করে আরও সংকট তৈরি হবে। সংবিধানে সে সমস্যাকে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হওয়া, ফলে সেখানকার সমস্যার সমাধান হবে।”
ভুলের পুনরাবৃত্তি হলে নতুন সংকট সৃষ্টি তৈরি হবে এমন এমন বক্তব্য হুমকি কী না প্রশ্নের জবাবে মাইকেল চাকমা বলেন, “এটা হচ্ছে বাস্তবতা, হুমকি না। বাস্তবতা এক জিনিস, হুমকি এক জিনিস। এটা হচ্ছে আমাদের আশঙ্কা। ১৯৭২ সালের সংবিধানে যদি সে সমস্যার সমাধান করা হত তৎপরবর্তী সময়ে আমরা এরকম সমস্যার সম্মুখীন হতাম না।”
স্বায়ত্তশাসন দাবির প্রতি কমিশন আশ্বস্ত করেছে কী জানতে চাইলে মাইকেল চাকমা বলেন, “তারা সুনির্দিষ্ট আশ্বাস দেয়নি। তবে কমিশন বলেছে বাংলাদেশকে চারটি স্বায়ত্তশাসিত (চার প্রদেশে ভাগ) অঞ্চলে ভাগ করার প্রস্তাবনা এনেছে। এক্ষেত্রে আমাদের সেখানে সুযোগ আছে, তার মাধ্যমে ওখানকার সমস্যার সমাধান হতে পারে। এখন দেশে যদি চারটা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হতে পারলে, পার্বত্য চট্টগ্রাম কেন নয়, পাঁচটা কেন নয়? তাহলে পার্বত চট্টগ্রামকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ঘোষণার ক্ষেত্রে বাধা দেখি না।”
ইউপিডিএফকে অনেকেই সন্ত্রাসী সংগঠন বলে থাকে-এই বিষয়ে তাদের মতামত জানতে চাইলে মাইকেল চাকমা বলেন, “এসব বিষয়ে নানা রকম মত পথ প্রচারণা আছে। ইউপিডিএফের গঠনতন্ত্র আছে এবং আমরা এখানে আলোচনা করেছি। আমরা কি ধরনের সংগঠন, কি নিয়ে রাজনীতি করি সেটা কাজের মাধ্যমে প্রতিফলন ঘটে। অন্যরা কি বলছে, কে কি বলছে এটা নিয়ে আমাদের কোন মাথা ঘামানোর দরকার নেই।”
১৯৯৭ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মাধ্যমে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি’ বলে মন্তব্য করেছেন মাইকেল চাকমা।
তার কথায়, “এটা ছিল দুর্বল চুক্তি। সাংবিধানিক স্বীকৃতি না থাকায় তাই যে কোন সরকার চাইলে তা বাতিল করতে পারে।”
আঞ্চলিক দলগুলোর নিবন্ধনের শর্ত শিথিলের প্রস্তাব ইউপিডিএফ করেছে বলে জানিয়েছেন মাইকেল চাকমা।
তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন শর্তের কারণে আমাদের দলের নিবন্ধন পাওয়া সম্ভব না। আঞ্চলিক দলের জন্য আলাদা বিশেষ ব্যবস্থা রাখার জন্য বলেছি।”
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কী প্রস্তাব দিয়েছেন জানতে চাইলে মাইকেল চাকমা বলেন, “নির্বাচন যত দ্রুত সম্ভব হওয়া অবশ্যই দরকার। নির্বাচন কালক্ষেপণ করার পক্ষে আমরা নই। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংস্কার কাজ শেষ করে যেন নির্বাচন দেয়। একটা গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে যেন ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়।”
সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত জানতে ও ঐকমত্যে পৌঁছাতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কমিশন কাজ শুরু করে।
সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশের ওপর ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মতামত জানতে চেয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। এরপর সেই মতামত ধরে সংশ্লিষ্ট দলের সঙ্গে সংলাপ করছে কমিশন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে ও প্রধান উপদেষ্টোর বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।