বর্তমানে সন্তু লারমা ও তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতৃবৃন্দ এক চরম রাজনৈতিক নিঃসঙ্গতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মুখপাত্র ড. কুরুণালংকার ঠাগুজ্জে সহ একাধিক প্রভাবশালী সহযোগী এখন কার্যত ভারত সরকারের সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত। অর্থাৎ, এঁরা সকলেই এখন ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার নিবিড় পর্যবেক্ষণে এবং নিয়ন্ত্রণাধীন।
ভারতে অবস্থানরত সন্তু লারমার নেতাকর্মীদের জন্য পরিস্থিতি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও অনিশ্চিত। তাঁদের জন্য এখন দুটি পথ খোলা— হয় ভারতের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে ভারতপন্থী হয়ে বেঁচে থাকা, নয়তো সর্বস্ব হারিয়ে, অপমানজনকভাবে, প্রায় উলঙ্গ অবস্থায় বাংলাদেশে ফেরত যাওয়া।
আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো— সন্তু লারমা নিজেও এখন ভারতীয় নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টিতে সন্দেহভাজন। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ও ডিজিএফআই-এর সঙ্গে তাঁর অতীত বর্তমান যোগাযোগ বা কথিত সংশ্লিষ্টতা তাঁকে একটি গোয়েন্দা চর-এর ছায়ায় আবৃত করে তুলেছে। এর ফলেই আজ তাঁর প্রতি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের আস্থা প্রায় শূন্যের কোঠায়। না জানি বাংলাদেশে ফেরত গিয়ে ইউনুসকে, সেনাবাহিনী ও ডিজিএফআইকে কি তথ্য ফাঁস করে দেন।
এই বাস্তবতার একটি প্রকট নিদর্শন পাওয়া গেল ২৫শে মে তারিখে। ওইদিন সন্তু লারমার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মুখপাত্র ডক্টর কুরুণালংকার ঠাগুজ্জের কলকাতায় গিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। কারণ, ডক্টর কুরুণালংকার ঠাগুজ্জে ভারতীয় ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিগুলোর ভয়ে, শারীরিক অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে কলকাতা যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করে। অর্থাৎ, সন্তু লারমার প্রতি তাঁর অন্যতম আস্থাভাজন সঙ্গীও প্রকাশ্যে দেখা করতে সাহস পেলো না শেষ সময়ে। এইবার বাংলাদেশে ফেরত গেলে দ্বিতীয়বার যে আসবেন, মনে হয় না।
এই চিত্র আমাদের এক গভীর বাস্তবতার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়— একজন রাজনৈতিক নেতার কতটা নিঃসঙ্গ, কোণঠাসা, এবং নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়লে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, যেখানে তাঁর ঘনিষ্ঠতম সহচরও তাঁর সঙ্গে শেষবারের মতো কুশল বিনিময় করতেও সাহস করেন না। সার্বিকভাবে, সন্তু লারমা এখন এমন এক রাজনৈতিক ও মানবিক শূন্যতার মধ্যে আছেন, যেখানে তাঁকে ঘিরে থাকা বলয়ের মানুষগুলোও আর তাঁর পাশে নেই— নেই সাহস, নেই আস্থা, নেই সঙ্গ। আর পার্বত্য চট্টগ্রামে মাঠে পর্যায়ের সশস্ত্র ক্যাডাররা সন্তু লারমার প্রতি বিশ্বাস রেখে জীবন দিচ্ছে, জীবন নিচ্ছে যা অহেতুক এবং খুবই দুঃখজনক।