পার্বত্য চট্টগ্রাম আদিবাসী যুব ফেডারেশন (সিএইচটিআইপিওয়াইএফ) বাংলাদেশ সরকারের আধাসামরিক বাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) – সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।
সংগঠনটি জানায়, পিসিজেএসএস কর্তৃক ১ জুলাই ২০২৫ তারিখে ছয়জন নিরীহ আদিবাসী বেসামরিক নাগরিককে অপহরণ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার, জাতিসংঘ এবং কূটনৈতিক মহলের সক্রিয় হস্তক্ষেপ দাবি করা হয়।
অপহৃতরা হলেন: ধনমুনি চাকমা (১৯), সুকেশ চাকমা (২২), লক্ষী শান্তি চাকমা (৩৫), ভাঙ্গা হাদা চাকমা (৩৫), শান বিকাশ চাকমা (৩৬) ও হুল্লায়া চাকমা (২২)।
তাঁরা সকলেই রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দুর্গম রাঙ্গাপানি ছড়া গ্রামের বাসিন্দা।
সংগঠনটি জানায়, আজ (১১ জুলাই) অপহৃতদের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করে পিসিজেএসএস ক্যাডাররা অপহরণের বিষয়টি স্বীকার করে এবং মুক্তিপণ হিসেবে ৬ লাখ টাকা (প্রায় ৫,৫০০ মার্কিন ডলার) দাবি করেছে।
সিএইচটিআইপিওয়াইএফ সভাপতি জনাব প্রজ্ঞা তাপস চাকমা বলেন: “পিসিজেএসএস একটি সরকারি স্বীকৃত আধাসামরিক বাহিনী, যাদের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৮ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইনের আওতায় আঞ্চলিক শাসন পরিচালনা করছে।
বিগত ২৭ বছর ধরে সরকার এই বাহিনীকে কোনো নির্বাচন ছাড়াই ক্ষমতায় রেখেছে এবং তাদের মিলিশিয়াদের অস্ত্রসহ রাখার অনুমতি দিয়েছে।
এই মিলিশিয়ারা আদিবাসী জনগণের বিরুদ্ধে অপহরণ, চাঁদাবাজি এবং হত্যাকাণ্ডের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে।
বাংলাদেশ রোম সংবিধিতে স্বাক্ষরকারী দেশ হওয়ায়, সন্তু লারমা তাঁর ক্যাডারদের এসব অপরাধের জন্য ‘কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’-এর আওতায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে দায়ী হতে পারেন।”
তিনি আরও বলেন, সন্তু লারমার পিসিজেএসএস সন্তু গ্রুপের বিরুদ্ধে শিশুসৈন্য নিয়োগ, অস্ত্র ও মাদক চোরাচালান এবং নিরীহ আদিবাসীদের ওপর দমন-পীড়নের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
তিনি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ও সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে জানান: “৪ জুন ২০২৫, ভারতীয় পুলিশ আগরতলা থেকে পিসিজেএসএস-এর ১৩ জন ক্যাডারকে গ্রেপ্তার করে।
তাদের মধ্যে ১৭ বছর বয়সী বিটু চাকমা শিশুসৈন্য হিসেবে পরিচিত। ১৯ জুন ২০২৫, ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী মিজোরামের লুংলেই জেলা থেকে আনুমানিক ১০৪.৩ মিলিয়ন টাকার মেথামফেটামিন ট্যাবলেট জব্দ করে, যার সাথে পিসিজেএসএস জড়িত।
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মিজোরাম পুলিশ পিসিজেএসএস ক্যাডার রনি চাকমা, অনির্বাণ চাকমা এবং রিবেং চাকমার কাছ থেকে দুইটি একে-৪৭ রাইফেল, পাঁচটি এম-৪ কার্বাইন, ২০টি ম্যাগাজিন, ৫০৪ রাউন্ড ৭.৬২ মিমি ও ৪,৬৭৫ রাউন্ড ৫.৫৬ মিমি গোলাবারুদ, নগদ টাকা, সিম কার্ড, এটিএম কার্ড এবং পাঁচটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে।”
তিনি আরও বলেন, গত ২৭ বছরে পিসিজেএসএস-এর সশস্ত্র কার্যকলাপে এবং সরকারি সহায়তায় সংঘটিত সহিংসতায় ১,০০০-রও বেশি আদিবাসী নিহত হয়েছেন।
সিএইচটিআইপিওয়াইএফ ছয়জন অপহৃত আদিবাসী নাগরিকের নিরাপদ মুক্তির দাবিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার, ঢাকায় নিযুক্ত কূটনৈতিক মিশন, এবং বাংলাদেশ সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।